‘প্রযুক্তিতে বাংলা: চাওয়া, পাওয়া ও আকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক টিএমজিবির ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত


‘প্রযুক্তিতে বাংলা: চাওয়া, পাওয়া ও আকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক টিএমজিবির ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

একুশের প্রথম প্রহর হতেই মোবাইলে বাংলা এসএমএসের মূল্য অর্ধেকে নেমে আসছে। সে অনুযায়ী বাংলা বর্ণে এসএমএস পাঠালে খরচ পড়বে ২৫ পয়সা।

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় প্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এ তথ্য জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

টিএমজিবির আহবায়ক মুহম্মদ খানের সঞ্চালনায় ‘প্রযুক্তিতে বাংলা: চাওয়া, পাওয়া ও আকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারে জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান, এসবিকে টেক ভেঞ্চারের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বশির কবির, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ চার সংগঠন বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, বিসিএসের সভাপতি শহিদ উল মুনীর, বাক্কোর সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন এবং আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম খাতের নেতৃবৃন্দ।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল সদস্য সুমন আহম্মেদ সাবির। মূল প্রবন্ধে তিনি দেশে প্রযুক্তি খাতে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, সর্বস্তরে বাংলা ও প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার বাড়াতে এবং সমৃদ্ধ করতে ২১ ফেব্রেুয়ারির প্রথম প্রহর হতে বাংলায় এসএমএসের মূল্য ২৫ পয়সা করেছে সরকার।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধিতে কয়েক বছর হতেই কাজ করছি। প্রযুক্তির এই সময়ে যদি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে বাংলাকে সমৃদ্ধ করতে না পারি তাহলে পিছিয়ে যাব। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। একটা সময় যেখানে বাংলায় কোনো তথ্য সমৃদ্ধ লেখা বা কনটেন্ট ওয়েবে খুঁজতে গেলে ঘাম ছুটত, এখন আর তা হয় না ‘

মন্ত্রী টিএমজিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের একটা আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা উচিত ছিল বাণিজ্য সংগঠন ও সরকারে বিভিন্ন সংস্থার। কিন্তু টিএমজিবি এটা আয়োজন করেছে।

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীতে ভাষার জন্য কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার নজির একমাত্র বাংলাদেশেরই আছে। তাই নিজের ভাষা নিয়ে কাজ করতে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে।

ওয়েবে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধিতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান মোস্তাফা জব্বার। এ জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ থেকে প্রকল্প চলমান রয়েছে। ইন্টারনেটে বাংলার ব্যবহার বাড়াতে এবং বাংলাকে আধিপত্যশীল ভাষা হিসেবে স্থান করে দিতে ১৬টি টুলস উন্নয়ন করছে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেয়ার কাজ সহজ হবে।

এছাড়াও মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলা বর্ণ এতদিন যে বৈষম্যের শিকার হয়েছে তা এবার একুশের রাত হতে অবসান হচ্ছে।

তিনি বলেন , ‘আমরা তখনই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব, যখন বাংলায় আমাদের আরও কনটেন্ট সমৃদ্ধ করতে পারব। এটা শুধু ইউটিউব বা ফেইসবুকে নয়, এটা সবধরনের কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে করতে হবে।’

দেশে ডটবাংলা ডোমেইন জনপ্রিয় না হওয়ার কারণগুলোও তুলে ধরেন মোস্তাফা জব্বার।

তিনি বলেন, নিবন্ধন ফি আড়াই হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৮০০ টাকা করা হলেও অনেকেই আগ্রহ দেখাননি। এর অন্যতম কারণ, দেশে বাংলা কনটেন্টের অভাব। সঙ্গে যারা ওয়েবসাইট তৈরি করেন তারাও বাংলায় সেটি করতে আগ্রহী হন না।

বর্তমান প্রজন্মের রোমান হরফে বাংলা লেখার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী জব্বার বলেন, নতুন প্রজন্মের রোমানে বাংলা লেখায় ঝোঁকার অন্যতম কারণ স্কুল পর্যায়ে টাইপিং শেখানোর অভাব। যেটা অনেক দেশেই আছে। আমাদের যদি স্কুল পর্যায়ে বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় আলাদা টাইপিং শেখানো যেত তাহলে এমনটা হতো না।

এ জন্য অবকাঠামো সুবিধার অভাবের কথা তুলে ধরে তা সমাধানে কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান মন্ত্রী।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই বাংলা নিয়ে কাজ করছি। দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিতে বাংলার সমৃদ্ধিতে কাজ রছে। তবে আমার মনে হয় এটা এখনো খুব বেশি দূর এগোতে পারিনি। এই কাজকে আরও ত্বরানিত করতে হবে। আর কনটেন্ট লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রমিত বাংলার ব্যবহার করতে হবে।

সোনিয়া বশির কবির বলেন, ‘আমার মূল আকাঙ্ক্ষা আমরা আমাদের ভাষায় কথা বললাম, কিন্তু যে যে ভাষায় সেটা শুনতে চায় সেটা যদি করা সম্ভব হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকার হবে। তাহলে বিশ্বে আমাদের উদ্যোক্তা ও তরুণরা আর কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে থাকবে না।’

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি শহীদ উল মুনীর বলেন, আমরা বাংলা নিয়ে হার্ডওয়্যার ক্ষেত্রে এগিয়েছি বলা যায়। তবে এটা আরও বেশি হওয়া দরকার।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)-এর সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, বাংলা ভাষায় কথা বলতে ও লিখতে পারার উপর জোর দিতে হবে। আমরা এখন শুদ্ধ ভাষায় বাংলা বলতে পারে এমন কর্মী কম খুঁজে পাই।

বাক্কোর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলা নিয়ে শুধু কাজ করতে হবে বলে বসে থাকলে হবে না। প্রযুক্তিতে বাংলাকে সমৃদ্ধ করতে হলে অবশ্যই সেটা ভালোবাসা থেকে করতে হবে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত শুধু ফেব্রুয়ারি হলেই বাংলা নিয়ে কথা হয়। কিন্তু আমার মনে হয় এটা সারাবছরই হওয়া দরকার। প্রযুক্তিতে বাংলাকে এগিয়ে নিতে হলে এটা করতেই হবে।’

সোর্স লিঙ্কঃ টেকশহর